আমি এক গেরিলা যোদ্ধা, পণ করেছি স্বদেশ মুক্তির,

শেলের মত বিঁধে বুকে বেঈমানের পরাধীন উক্তির।

সাহস, তেজ— জীবন দিয়া রক্ষা করিব স্বদেশ আমি,

আমার মাটি, আমার থাকিবে, যুদ্ধ করিব আমি দিবাযামী।

আমি এক গেরিলা যোদ্ধা, মাগো, ক্রলিন করি,

বহু দূর এসেছি, মাগো, ফাঁকি দিয়েছি হানাদার তরী।

একটু খাবার দাও, হাঁটিতে পারি না যে, এখন আর,

উহ্ গায়ে ভীষণ ব্যথা তোমার ছেলের, কিছু দেখ নি যে তার।

ধূসর বালু চরে পাহাড় টিলায়, রাত দিন কত কাটায়,

আজ এখানে কাল ওখানে, সময় যায় তার হাঁটায়, হাঁটায়।

আমি গেরিলা, না, না, না পালায়ন নয়, কৌশল বলে,

ছিনিয়ে আনিব জয়, দেখি যাই হেথায় আছে, গর্ত তলে—

পুড়িল তাবু তার, তবু ডাগর চোখে নিল প্রাণ শত জনের,

কুকুরের মত যারা দংশিল শত মা বোনের সম্ভ্রম, দশু্য বনের।

আমি গেরিলা, মেশিনগান, ষ্টেনগানের দিয়া ঝট্কা গুলি,

শক্রুবুহ্য মৌমাছির বাসার মত, ঝাঁঝড়া, ঝাঁঝড়া করে তুলি।

বিটপের আড়ালে, বাতা বনের নিচে, কিংবা নদীর তটে,

থেকে নিরিবিলি আমি একটা একটা করে বানর মারি বটে।

 

একাই একশ, দুঃখিনি মায়ের সন্তান উদ্বাস্তু শিবিরের

হাজার মুক্তিকামী মানুষের শক্তি আমি ভাংগা নীড়ের।

এক দুর্জয় সৈনিক, পালাতে জানি না, না পরাজয় নয়,

বর্জোয়া অসত্য হিংস্র যাদুর দানব, করিনা, তার ভয়।

 

চিরকাল চলছে মোর যুদ্ধ, বল্ পিশাচ আর কত দিন,

অপরাধের রাজত্ব করিবে, রাখিব না তোর কোন চিন্।

আমি গেরিলা এক, জম্ম দিতেছি লক্ষ গেরিলা, ধরাময়,

এক গেরিলা মরে গেলে, হাজার গেরিলা জম্ম এক সাথে লয়।

গাছের পাতা খাই, মরুতে পুড়ি, মায়ের কাছে হাত পাতি,

এক বুক সাহস নিয়ে, আমি গেরিলা শুধু যুদ্ধে আছি মাতি।

যা—শেতাংগ, যা পাঁঠা, —যা বেঈমান, হানাদার মুশরিক,

পাঠিয়েছি একাই যম ঘরে, যমদূত আমি, শুধু আজ শিখ—

এ বাচ্চা সিংহের, কাল সাপের, মুক্তিকামী পতঙ্গ দলে,

পুড়িয়া পুড়িয়া খাটি হই, আরো বেশি পোড়া হলে।

 

দেশ প্রেম আমার হাতিয়ার—ধরায় মোরা একই পথের যাত্রী,

মোরা ঈশ্বরের হাতিয়ার, রাত্রিরে বানাই দিন, দিনে রে—রাত্রি।

প্রকৃতি যুগিয়েছে রসদ আর, মন্ত্র পেয়েছি গগন হতে—

মুক্তি বাহিনীর নবজাত শিশু, মুক্তি চায় চড়ে জয় রথে,

দাইয়ের কবল হতে মুক্তি চায়, বীর প্রসূ মায়ের ছেলে—

আনিবে সূর্য কুড়িয়ে আজ, দেখ্ তুই, অবহেলে,

গর্ব আমি বাংলার, ভিয়েতনামের দুনিয়ার গর্ব যথা—

লড়িতে চাই, লড়িয়া বাঁচি, গেরিলা যুদ্ধে, গেরিলা, তথা।

 

তারিখ— ১৫/১২/৮৬— টিকরপুর।