৪. কোন এক মুক্তি যোদ্ধার অভিপ্রায়

৪. কোন এক মুক্তি যোদ্ধার অভিপ্রায়

 

আমার ভীষণ ইচ্ছে করে, ইচ্ছে করে

লিখি, একটি কবিতা লিখি,

যে কবিতা আর কোন দিকে নয়,

এ নহে সাধ— বাঁচাটা করিব ছন্দময়,

ক্ষুধার দাহনে মরি আর অবশেষে হায়—

উঁচু—নিচু দুনিয়াকে শিখি।

(more…)

৩. তৃতীয় প্রহরে জেগে আছি

৩. তৃতীয় প্রহরে জেগে আছি

তৃতীয় প্রহরে জেগে আছি

 

বিরস পৃথিবীর সরস অশান্তি উড্ডীয়মান—

তৃতীয় প্রহরে জেগে আছি—

বেওকুপের নাভী ছিঁড়ে খাচ্ছে

আগন্তুক এক হাড়ি রৌদ্র

ক্লান্তির মানুষ বুঝে নিক্—

ঈশান কোণের সংকেত;

বিমর্ষ বাতাস এই মুখে

দেখাচ্ছে, হুতুম ভয়, তবু

তৃতীয় প্রহরে জেগে আছি

আদি রস পান করতে কে এসেছিল,

এই বুকে

তখনও ছিল

ফুল্ল মাঝির সবল হাত

একটি ধ্যানমগ্ন, বাঙ্গালী বীজ।

এখন বৈশাখের বেশ্যা, উদোম

করেছে তার যোনী

যেখানে গনোরিয়া ক্লিষ্ট সবুজ শ্যামলিমা—

তৃতীয় প্রহরে জেগে আছি

রাখাল এখন হিসেব কষে—

স্নায়ুহীন ঠেঁাটে

জাবর কাটে গরু—

শান্তির ঘাম নেই নাকাগ্রে

আমি হৃদয়ে দেখেছি,

চাঞ্চল্যকর খুনের ফেরারী আসামী

ধর্ষিতা অতঃপর নিহত মায়ার

নিঃসাড় দেহ—

পুকুরের ধামের নিচে

নাচে ইতর ছোট লোক ব্যাঙ্গাচী,

বৈশাখের ধান, দুষ্ট কাকেরা

খায় না

বিদেশী সাহায্যপুষ্ট শহুরে দেহ পসারিণী

ইংলিশ রোড়স্থ

তিলোত্তম এই, মাগী

মুখ টিপিয়ে হাসে

নিন্তব্ধ জরাজীর্ণ রাতে

মার্কিন লিঙ্গ ক্রমশ ঢুকিয়াছে

জরায়ু জটরে—

অন্তসত্তা মাঠ

এখন এপাশ ওপাশ করে।

 

হুঁশিয়ার—

দামাল ছেলে ঐ আসছে ফাগুনে

ঐ বৈশাখের ঝড়ে

বর্ষা ভাদরে

ঐ আসছে, নেপথ্যে শোনা যায়

বির্দীর্ন উচ্চারণ—

হুঁশিয়ার— এ মা—টি আমার।

অপরাজেয় বাংলা চেপে আছে

এই বুকে— এই হাটে, মাঠে—ঘাটে

বিস্ফোরিত ডাগর চোখে

লক্ লকে আগুনের জিহ্বা

আমি দেখছি, নাটকের শেষ নেই—

ঝাঁক ঝাঁক সারস চঞ্চু তুলে নেবে

মেঘঘন আকাশের অপর পিঠে

মনের দেশে ক্ষোভের তোল পাড়—

বিষাক্ত সাপ হাঁ করে—

তৃতীয় প্রহরে জেগে আছি।

 

তারিখ— ১৪/০৪/৯০—নবাবগঞ্জ, ঢাকা।

২. ঝড়

               ঝড় 

গগন ছেয়ে আসিল ঝড় আসিল, ঝড়, ঝড়,

ধম্কে ওঠে, চম্কে ওঠে, গুরু গর্জনে কড়ার কড়্।

বিজলি নাচে ধমনী নাচে, উন্মাদ হল ধরণী,

শুক্নো গাঙ্গে তীর ভাঙ্গে কাঁপে পাপের তরণী।

মাতিয়া ছুটিয়া চলি নৃত্য চপল দুর্যোগের দিন,

ধ্বংসের যামী ভোর দেখি, বাজাই রুদ্র সুরে বীণ।

কে এল আজি, ডেকে যায় ঐ দূর্ কেঁদে কেঁদে,

কে এল আজি, বিপ্লবী সাজে, যায় সেধে সেধে।

বিষম বাধা রহি রহি কাঁদা আর নয়, আর নয়,

অন্যায় রোধে চিৎকারী ওঠে, ঐ দেখ্ দিক বলয়।

শিলা ঝরে মাথার ‘পরে চূর্ণি দেয় রক্ত চাপ,

ত্যাজিয়া আসন কাঙ্গাল, এবার ছাড়ো ছাড়ো হাফ।

বর্ষণে বাতাসে করি একাকার নাচো, নাচো, নাচো,

কীসের এত ভয়, হবে হবেই জয়—সফল বাঁচা বাঁচো।

ভোট জালিয়াত, দুমুর্জদল একসাথে বাস করে ঐ,

ফাঁসির দড়ি গলায় দিয়ে বিবেক হাসে, হৈ, হৈ, রৈ, রৈ।

পশুর দল ঠায় দাঁড়িয়ে করে মাছের মায়ের পুত্রশোক,

আর দেখিব কত বল্ বল্ ওরে বল্ যত গরীব লোক।

কিসের আশায় বেঁচে আছিস্ অন্যায় চেপে তোর মনে,

দিবে নাকি এক বেলা ভাত ক্ষুধার্ত ঐ, লক্ষ জনে।

কথার ফুল ঝুরি—গন্ধ নাহি তাতে, আহা গন্ধ নাহি তাতে,

নেতৃত্ব— দেখ্ ছলে, কলে চুরি করে অঁাধারে গভীর রাতে।

রক্ত নেশায় উন্মাদ আমি, বাঁচার নেশায় আজ উন্মাদ,

সভ্যতার ঐ মাথা খেয়ে, খাইব পরে কোমল চাঁদ।

কিসের তরে ভয় করিব, সিংহ রূপে বাচঁবো ক্ষণকাল,

মরতে যদি হবেই আমার, করব মরণ কেন অন্তরাল।

এগোয় তোরা কূট কুশলী—সাহস যদি থাকে বুকে,

আর পারি না, আর পারি না, চুষ্তে আঙ্গুল লুকে লুকে।

চিনি আমি তোর্ চেহারা, রে পিশাচ, রে দড়িবাজ ধন চোর,

একবার যদি পাই ছাড়া, আর রক্ষা নাহি থাকবে তোর।

ঝড়ের বেগে ছুট্ব আমি, মুষড়ে দেব কাল হাত,

কাল নাগের ছোবল দিয়ে, মারব যত জাত অভিজাত।

ক্ষুধার জ্বালা সইতে নারি, রইতে নারি ঘরে আর,

হাভাত ঝড় এসে কেন, ভাঙ্গলে শুধুই ঘরটি আমার।

 

০৪/০২/১৯৮৮ খ্রিঃ টিকরপুর, ঢাকা।

৩. তৃতীয় প্রহরে জেগে আছি

১.মুক্তির যুগ পুরুষ 

 

ভিসুভিয়াস আমিই; নিত্য জ্বলন্ত আমার লাভা,

এই মাঠ চৌচির উত্তাপে, কোথা উষার সোনালি আভা?

নির্মল শান্তির বিছানায় শুয়ে কেন, নরসিংহ আজ,

আত্মগত স্বাধীন উচ্চারণ কোথা, ন্যায় দন্ড প্রতাপরাজ—?

লক্ষ শহীদ প্রদীপ নির্বাপিত; দুঃসহ যন্ত্রণায় দেশ মাতা,

ঐ দেখ্ খুনী সব বেঁধেছে দল, সেনাপতি বেহায়া শুয়োর যা—তা।

নহে, নেতা নহে, গণ মানস, কোথাকার এই মূঢ় ভঁূইফোর,

বসেছে ঘাড়ে ঝাঁকিয়া, আজ শুনি দেশে বেহুলা কান্না সুর।

(more…)